আতিকুর রহমান মানিক :: মৎস্য অধিদপ্তরাধীন বাগদা চিংড়ী চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের কার্য্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে প্রায় সাত বছর যাবৎ। আর এতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শহীনতায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন কক্সবাজার জেলার হাজার হাজার চিংড়ী চাষী, ঘের মালিক ও ডিপো মালিকসহ এ সেক্টরের সাথে জড়িত অপরাপর পেশাজীবিরা।
২০১২ সালের জুন মাসে বন্ধ হয়ে যাওয়া উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারী কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় চরম হতাশা ও অনিশ্চয়তায় পতিত হয়েছেন চিংড়িখাত সংশ্লিষ্ট জনসাধারণ।
প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, বাংলাদেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানীপন্য বাগদা চিংড়ির চাষ, উৎপাদন ও রপ্তানী বৃদ্ধি এবং এ সেক্টরের সার্বিক উন্নয়নকল্পে বিগত ২০০২ সালে মৎস্য অধিদপ্তর ৫ বছর মেয়াদী “বাগদা চিংড়ী চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারন প্রকল্প” গ্রহণ করে।
প্রকল্পের অধীনে কক্সবাজার, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাসহ দেশের চিংড়ী চাষ প্রধান ৪টি জেলায় ব্যাপক কার্যক্রম শুরু করা হয়। তখন কক্সবাজার মৎস্য অধিদপ্তরাধীন এডিবি হ্যাচারী ক্যাম্পাসে অত্র প্রকল্পের সহকারী পরিচালকের কার্যালয় স্থাপন করা হয়। উক্ত প্রকল্পের অধীনে কক্সবাজার জেলার ৮ টি উপজেলার উপকূলীয় চিংড়ী চাষীদের মধ্যে আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ী চাষের প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, ভাইরাসমুক্ত চিংড়ী পোনা মজুদের গুরুত্ব, প্রদর্শনী খামার স্থাপন, চাষীদের মধ্যে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় সফরসহ ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। এ ছাড়াও চিংড়ী চাষে অন্যতম প্রতিবন্ধক “হোয়াইট স্পট ভাইরাস” রোগ প্রতিরোধ ও সনাক্তকরণে প্রতিটি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার চাষী ও খামারীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
বাগদা চিংড়ী চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারন প্রকল্পের সাবেক সহকারী পরিচালক (পরে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কক্সবাজার, হিসাবে অবসরে যাওয়া) অমিতোষ সেন জানান, উক্ত প্রকল্পের অধীনে জেলার ৬ হাজার চিংড়ী চাষীকে বিভিন্ন মেয়াদে বাস্তব প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ ছাড়াও চিংড়ির হোয়াইটস্পট রোগ ও ভাইরাস সনাক্তকরণে পিসিআর ল্যাবরেটরী স্থাপন, মোবাইল টেষ্টিং ভ্যানের মাধ্যমে বিভিন্ন উপকুলীয় এলাকায় গিয়ে চিংড়ী ঘেরের মাটি ও পানি পরীক্ষা ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত সেবা এবং পরামর্শ প্রদান করা হয়। এতে চিংড়ী চাষীরা আধুনিক চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পায় এবং চিংড়ী উৎপাদন ও রপ্তানী ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। উক্ত প্রকল্পের ব্যাপক সফলতা ও জনপ্রিয়তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ ২০০৭ সালে শেষ হয়। পরে এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২য় পর্যায়ে আবারো ৫ বছরের জন্য উক্ত প্রকল্প নবায়ন করেন। ২য় পর্যায়েও বহুমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে এ প্রকল্প দেশের বাগদা চিংড়ি সম্পদের উৎপাদন ও রপ্তানী বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রকল্প চলাকালীন ১ দশকের মধ্যে দেশে চিংড়ী উৎপাদন ও রপ্তানী দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়।
উৎপাদিত চিংড়ী বিদেশে রপ্তানী করে এসময় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। কিন্তু বিগত ২০১২ সালের জুন মাসে ২য় পর্যায়ের মেয়াদ শেষ হলে অদ্যবধি জনহিতকর উক্ত প্রকল্পটি আর নবায়ন করা হয়নি। ফলে বিগত ৭ বছর ধরে চিংড়ীচাষ সংক্রান্ত মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
এর ফলে এখন প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণহীনতায় ভূগছেন জেলার হাজারো চিংড়ী চাষী ঘের মালিক।
মহেশখালীর চিংড়ি চাষী আমির খান জানান, প্রতিবছরের মত এ বছরও গত মে মাস থেকে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার ঘেরসমূহে শুরু হয়েছে বাগদা চিংড়ি চাষ। এখন চলছে চিংড়ি চাষের ভরা মৌসূম। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ পাচ্ছেননা চাষীরা।
দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলার হাজারো চিংড়ি চাষী, উদ্যোক্তা, খামারী ও ঘের মালিকরাও এমনটিই জানিয়েছেন।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিগত কয়েক বছরে জেলায় বাগদা চিংড়ি উৎপাদন কমে গেছে আনুপাতিক হারে। সদর উপজেলার পশ্চিম গোমাতলীর চিংড়ি চাষী হান্নান মিয়া বলেন, ভাইরাসজনিত রোগে বিভিন্ন ঘেরে চিংড়ির মড়ক এখন নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর ফলে উৎপাদন কম হওয়ায় প্রয়োজনীয় চিংড়ির অভাবে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে রপ্তানীমুখী চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরন কারখানাগুলো। কক্সবাজার শহরতলীর লিংক রোড এলাকার বিসিক শিল্প নগরীতে স্হাপিত কয়েকটি বাগদা চিংড়ি প্রসেসিং কারখানাও এখন বন্ধ হওয়ার পথে।
চিংড়ি রপ্তানীকারকরা বলেন, ক্ষতিকর কেমিক্যাল মুক্ত বাংলাদেশী “অর্গানিক চিংড়ি”র সুনাম ও চাহিদা রয়েছে রপ্তানীবাজারে। কিন্তু উৎপাদন কম হওয়ায় চাহিদা অনুপাতে সরবরাহ করতে না পারায় প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশী বাগদা চিংড়ি। আর এরস্হলে বাজার দখলে নিচ্ছে চীন ও থাইল্যান্ডে উৎপাদিত “ভেনামি” প্রজাতির চিংড়ি।
বাংলাদেশের ২য় গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানীপন্য চিংড়ী খাত সংশ্লিষ্টরা “বাগদা চিংড়ি চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারন প্রকল্প” আবারো চালু করার দাবী জানিয়েছেন।
প্রকাশ:
২০১৯-১০-২৪ ১৪:৩৬:৫৬
আপডেট:২০১৯-১০-২৪ ১৪:৩৬:৫৬
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে ১১৪ টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৩ লক্ষ ৬১ হাজার ১০৩ জন ভোটা
- রামুতে গাড়িযোগে পাচারকালে ২০ হাজার ইয়াবাসহ ২ যুবক আটক
- চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: লড়াই চলছে শেয়ানে শেয়ানে
- চকরিয়া-পেকুয়ায় দুই লবণ চাষী নিহত, উড়ে গেছে বসতঘর
- চকরিয়ায় চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ
- চকরিয়ায় প্রভাবশালীর কাছে জিম্মি অসহায় পরিবার
- পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কে কোন প্রতীক বরাদ্দ পেলেন
- ব্যাপক উৎসাহ—উদ্দীপনায় সাংবাদিক সংসদের এক যুগপূর্তি উৎসব সম্পন্ন
- চকরিয়ায় উপকুলের সাগর চ্যানেলের ট্রলার থেকে ৩৮ কোটি টাকা মূল্যের ১২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার
- চকরিয়া হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ
- অবাঞ্চিত ঘোষণা নব-গঠিত মাতামুহুরী আওয়ামী লীগের
- চকরিয়া ভরামুহুরীতে বাড়ি নির্মাণে বাঁধা হামলা: নারীসহ আহত ৩, রড সিমেন্ট ইট লুট
- সোহেল,জনি,রাজ্জাক ও দেলোয়ার চেয়ারম্যান নির্বাচিত: একটিতে ফলাফল নিয়ে ধোঁয়াশা…
- অবাঞ্চিত ঘোষণা নব-গঠিত মাতামুহুরী আওয়ামী লীগের
- চকরিয়ায় উপকুলের সাগর চ্যানেলের ট্রলার থেকে ৩৮ কোটি টাকা মূল্যের ১২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার
- চকরিয়া হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ
- আজ ২৯ এপ্রিলের ভয়াবহতা এখনও ভুলেনি উপকূলবাসী
- পেকুয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কে কোন প্রতীক বরাদ্দ পেলেন
- চকরিয়ায় প্রভাবশালীর কাছে জিম্মি অসহায় পরিবার
- ব্যাপক উৎসাহ—উদ্দীপনায় সাংবাদিক সংসদের এক যুগপূর্তি উৎসব সম্পন্ন
- চকরিয়ায় চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৩ জন প্রার্থীর মাঝে প্রতীক বরাদ্দ
- চকরিয়া-পেকুয়ায় দুই লবণ চাষী নিহত, উড়ে গেছে বসতঘর
পাঠকের মতামত: